সরকার আদম আলী: নরসিংদী একটি মারাত্মক অপরাধ প্রবণ শহর। খুন, অপহরণ, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ সংঘটিত হয় এই শহরে। এমন দিনের সংখ্যা কম যে দিন শহরে কোন অপরাধ সংঘটিত হয় না। ব্যাংক থেকে নিরাপদে টাকা উত্তোলন করে বাড়ি ফিরতে পারে না মানুষ। টাকা নিয়ে নিরাপদে মার্কেটিং করতে সাহস পায় না শহরবাসীরা। গত কয়েক বছরে এই শহরে কত সংখ্যক খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি সংঘটিত হয়েছে তার কোন পরিসংখ্যান নেই। মারাত্মক সব অপরাধের কারণে নরসিংদী জেলা শহরটি এর যুগযুগের ব্যবসায়িক ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। রেল, সড়ক ও নৌ পথে শতশত যাত্রী প্রতিদিন নরসিংদী জেলা শহরে যাতায়াত করে। আর প্রায় প্রতিদিনই এসব মানুষ কোন না কোন অপরাধের শিকার হয়। শহর ও শহরের বাইরে থেকে আসা মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় শহরের বড় বাজারটি দিন দিন ভেঙ্গে যাচ্ছে। দূরদুরান্ত থেকে ক্রেতারা এখন আর নরসিংদী শহরে খুব একটা আসছে না। শহরের ব্যবসায়িরা জানিয়েছে ডাকাতি, রাহাজানি ও ছিনতাইয়ের ভয়ে ব্যবসায়িরা নরসিংদী শহর বিমুখ হয়ে পড়েছে। বিগত কিছুদিন পূর্বে ছিনতাইকারীদের কবলে পতিত হয়েছে নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম শেখ তুলু। প্রকাশ্য দিন দুপুরে সোনালী ব্যাংকের ট্রেজারী শাখা থেকে ৫ লক্ষ ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করে ব্যাংকের মূল ফটকের সামনে এসে ব্যাগটি হেন্ডেলে ঝুলিয়ে পিছনের চাকার তালা খুলতে যাবার সাথে সাথেই ৪/৫জন ছিনতাইকারী অভিনব কায়দায় তার টাকা ভর্তি ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এই ঘটনাটি ঘটে ব্যাংকে প্রহরারত পুলিশের সামনে। ছিনতাই ঘটনার পর ব্যাংকের সিসি ক্যামেরায় দেখা যায় ছিনতাইকারীরা চেম্বার নেতা শেখ তুলুর টাকা ভর্তি ব্যাগটি নিয়ে অপেক্ষমান একটি ইজিবাইকে চরে নিরাপদে শহর থেকে বেরিয়ে যায়। যদিও পুলিশ চেষ্টা করলে এই ছিনতাইকারীদেরকে গ্রেফতার করতে পারতো। এই ঘটনার পর নরসিংদী শহরের ব্যাংকগুলোতে ব্যাংক আতঙ্ক দেখা দেয়। আতঙ্ক দেখা দেয় ব্যাংকের সাধারণ গ্রাহক ও ব্যবসায়িদের মধ্যে। আইন শৃঙ্খলার এই দুরাবস্থা নিরসনে নরসিংদী শহরে ক্লোজ সার্কিট বা সিসি ক্যামেরা বসিয়েছেন নরসিংদী পৌরসভার মেয়র কামরুজ্জামান কামরলি। তিনি নরসিংদী শহরের মোড়ে মোড়ে শহরের বিভিন্ন স্থাপনাগুলোতে চতুমুর্খী ক্যামেরা বসিয়েছেন। বাজির মোড়, হেমেন্দ্রসা’র মোড়, বটতলার মোড়, পায়রা চত্বরসহ ১৫/১৬টি মোড়ে চতুমুর্খী ক্যামেরা বসানো হয়েছে। যার ফলে কোন অপরাধী অপরাধ করে শহর থেকে বেরিয়ে যাবার সময় তা সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়বে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ যদি আন্তরিক হয় তবে শহরে এখন আর বড় ধরণের কোন অপরাধ সংঘটিত হবার সুযোগ থাকবে না। তবে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শুধু সিসি ক্যামেরা বসিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সিসি ক্যামেরার সাথে সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখতে হবে। নিবিড় পর্যবেক্ষণ থাকলেই কেবল অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।


0 comments:

Post a Comment