গাজী হানিফ মাহমুদ, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ : নিবারণ রায়, নরসিংদীর প্রবীণ সংবাদকর্মীদের একজন। তাকে সবাই দাদা বলে ডাকেন। সাদাসিধে সহজ সরল মানুষ। তাকে বিলাসি কোনো পোশাক পড়তে কোনোদিন দেখেনি কেউ। সাদা রঙের পাজামা-পাঞ্জাবি এই ছিল তার ড্রেস।
১৯৭১’এ কলমের পরিবর্তে অস্ত্র হাতে তুলে নেন। তখন কী তার পোশাক পাল্টে গিয়েছিল? জানতে ইচ্ছে করে। কিন্তু জানা হয় নি। রণাঙ্গনের সেই দিনগুলোয় কী কলমটা তিনি তুলে রেখেছিলেন? কলমে যেমন তুখোড়, অস্ত্রের ভাষাতেও একই রকম দক্ষতায় কথা বলেছেন তিনি। তবে তার সাংবাদিক পরিচয়ই সব সময় বড় ছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওপর মুক্তিবাহিনীর হামলার খবর তিনি পরিবেশন করতেন তৎকালীন সাপ্তাহিক বাংলার বাণী পত্রিকায়। মুক্তিযুদ্ধে এই কলম যোদ্ধার বিশেষ অবদান থাকলেও স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও মেলেনি তার মুক্তিযোদ্ধার সনদ। তিনি জন্ম নেন ১৯৫২ সালের ৩০ আগস্ট।
তিনি জানান, ছেলেবেলা শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন ভাষণ রেডিওতে শুনতে শুনতে তিনি বেড়ে ওঠেন। মূলত তখন থেকে তিনি রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালে তিনি সাটিরপাড়া কালিকুমার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করেন। এরপর ভর্তি হন নরসিংদী সরকারি কলেজে। মূলত তখনই যুক্ত হন ছাত্র রাজনীতিতে। ১৯৬৯ থেকে ৭০ সাল পর্যন্ত ছিলেন কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তৎকালীণ নারায়রণগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনীতিতে জড়িত হয়ে পড়লেও তার মনে লালিত স্বপ্ন ছিল, সাংবাদিক হওয়ার।
ছাত্র অবস্থায় তিনি বাংলার বাণী পত্রিকার মাধ্যমে যুক্ত হন সাংবাদিকতায়। তখন কোন ফ্যাক্স ছিল না, টেলিফোন থাকলেও ঠিকমতো ডায়াল টুন পাওয়া যেত না। পত্রিকার প্যাডে সংবাদ লিখে ডাকযোগে সংবাদ পাঠাতে হতো পত্রিকা অফিসে। সময় লাগত ৩ থেকে ৪ দিন। মাঝে মধ্যে সংবাদ পাঠানো হতো টেলিগ্রামেও, তারপরও সময় লাগত ১ থেকে ২ দিন। পত্রিকা থেকে সম্মানি পেতেন মাসিক ২০০ টাকা, লাইনেস পেতেন ১০ পয়সা ও ছবির জন্য পেতেন ১০ টাকা। তিনি যখন প্রথমে বাংলার বাণী পত্রিকার সাথে যুক্ত হন তখন বাংলার বাণী ছিল সাপ্তাহিক, মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাপা হতো আগরতলা থেকে। পরে পত্রিকাটি প্রকাশ হয় দৈনিক হিসেবে।
নিবারণ রায় বলেন, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে শত শত যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়। ২৫ মার্চ রাতে বাঙালির ওপর হানাদারদের হামলা শুরু হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন নিবারণ রায়।
৩, ৪ ও ৫ এপ্রিল হানাদাররা নরসিংদী বাজার পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দেয়। এ সময় নিহত হয় ১৩ জন। এরপরেই শুরু হয় প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও চোরাগুপ্তা হামলা। তখন গোটা শহরে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে ক্যাপ্টেন সায়গলের নেতৃত্বের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি কোম্পানি হানাদারদের প্রতিরোধ করতে নরসিংদীতে আনসার ও পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়। তখন নিবারণ রায়সহ ছাত্রলীগ নেতা (পরে মেজর) সামসুল হুদা বাচ্চুর নেতৃত্বে আলী আকবর, নুরুল ইসলাম গেন্দু, মানিক লাল সাহা, হারাধন সাহা, ফজলুল কাদির সওদাগর, সুভাষ সাহা, আব্দুল গফুর ভূইয়া, কেশব লাল সাহা, খালেকুজ্জামান, আবুল হায়াৎ সরকার, হারুন অর রশিদ, আবুল কাসেম, জগদীশ আচার্য, স্বপন সাহা (পরে সাংবাদিক), মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (বর্তমান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী), আক্রাম হোসেন, আপেল মাহমুদ (সঙ্গীত শিল্পী) ও মেজবাহ উদ্দিন ইরানসহ আরো অনেকে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কোম্পানিকে স্বাগত জানান।
ওই সময় পাকবাহিনী পাঁচদোনায় হামলা চালিয়ে নরসিংদী টেলিফোন এক্সচেঞ্জ দখল করে নেয়। শুরু হয়ে যায় চোরাগুপ্তা হামলা। তখন নিবারণ বায় নরসিংদী থেকে পালিয়ে যান নবীনগর থানার একটি গ্রামে, তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে। এ সময় এলাকায় শুরু হয় গণডাকাতি। তিনি কোনাবন বর্ডার দিয়ে আগরতলা যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু যাওয়ার পথে পাকি বাহিনীর গাড়ির সামনে পড়েন। কিন্তু রাস্তার পাশের পাটখেতে লুকিয়ে জীবন রক্ষা করেন। পরে নৌকায় করে নদী পার হয়ে চলে যান আগরতলা। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে চলে যান আসামের শীতচর ও করিমগঞ্জ এলাকায়। ওই খানে দুই মাস অবস্থানের পর আবার চলে আসেন আগরতলায়। পরে আগরতলা থেকে চলে আসেন বাংলাদেশে। সব শেষে বাংলাদেশে এসে নরসিংদীর আলোকবালী মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্পে এসে যোগ দেন।
১৯৭৫ সালে ৪টি পত্রিকা বাদে বাংলার বাণী পত্রিকাসহ সব পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। তখন তিনি যোগ দেন নরসিংদী সংবাদদাতা হিসেবে দৈনিক ইত্তেফাকে। ১৯৮০ সালের দিকে নরসিংদীতে আলী হোসেন তালুকদারের স্ত্রী সিতারা বেগমকে অপহরণ করে আটকে রাখে সন্ত্রাসী ইমদুর লোকেরা। তৎকালীন নরসিংদীর তরুণ সাংবাদিক নিবারণ রায় ইত্তেফাক অফিসে খবরটি পাঠানোর জন্য কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। ইত্তেফাকে সংবাদটি ছাপা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইমদুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বর্তমানে নিবারণ রায়ের বয়স ৬৫। দেখলে বোঝাই যায় না তার বয়স এতোটা। সাংবাদিকতা করছেন গত ৪৫ বছর ধরে। নরসিংদী জেলা সংবাদদাতা হিসেবেই রয়েছেন দৈনিক ইত্তেফাকে দীর্ঘ সময় ধরে।
নরসিংদীর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নিবারণ রায় টানা ২২ বছর ধরে এই পদে ছিলেন। এছাড়া সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছেন কয়েকবার। তিনি প্রথম দিকে ৪/৫ জন সাংবাদিক নিয়ে নরসিংদী প্রেসক্লাব গঠন করেন।
১৯৭১’এ কলমের পরিবর্তে অস্ত্র হাতে তুলে নেন। তখন কী তার পোশাক পাল্টে গিয়েছিল? জানতে ইচ্ছে করে। কিন্তু জানা হয় নি। রণাঙ্গনের সেই দিনগুলোয় কী কলমটা তিনি তুলে রেখেছিলেন? কলমে যেমন তুখোড়, অস্ত্রের ভাষাতেও একই রকম দক্ষতায় কথা বলেছেন তিনি। তবে তার সাংবাদিক পরিচয়ই সব সময় বড় ছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওপর মুক্তিবাহিনীর হামলার খবর তিনি পরিবেশন করতেন তৎকালীন সাপ্তাহিক বাংলার বাণী পত্রিকায়। মুক্তিযুদ্ধে এই কলম যোদ্ধার বিশেষ অবদান থাকলেও স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও মেলেনি তার মুক্তিযোদ্ধার সনদ। তিনি জন্ম নেন ১৯৫২ সালের ৩০ আগস্ট।
তিনি জানান, ছেলেবেলা শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন ভাষণ রেডিওতে শুনতে শুনতে তিনি বেড়ে ওঠেন। মূলত তখন থেকে তিনি রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালে তিনি সাটিরপাড়া কালিকুমার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করেন। এরপর ভর্তি হন নরসিংদী সরকারি কলেজে। মূলত তখনই যুক্ত হন ছাত্র রাজনীতিতে। ১৯৬৯ থেকে ৭০ সাল পর্যন্ত ছিলেন কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তৎকালীণ নারায়রণগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনীতিতে জড়িত হয়ে পড়লেও তার মনে লালিত স্বপ্ন ছিল, সাংবাদিক হওয়ার।
ছাত্র অবস্থায় তিনি বাংলার বাণী পত্রিকার মাধ্যমে যুক্ত হন সাংবাদিকতায়। তখন কোন ফ্যাক্স ছিল না, টেলিফোন থাকলেও ঠিকমতো ডায়াল টুন পাওয়া যেত না। পত্রিকার প্যাডে সংবাদ লিখে ডাকযোগে সংবাদ পাঠাতে হতো পত্রিকা অফিসে। সময় লাগত ৩ থেকে ৪ দিন। মাঝে মধ্যে সংবাদ পাঠানো হতো টেলিগ্রামেও, তারপরও সময় লাগত ১ থেকে ২ দিন। পত্রিকা থেকে সম্মানি পেতেন মাসিক ২০০ টাকা, লাইনেস পেতেন ১০ পয়সা ও ছবির জন্য পেতেন ১০ টাকা। তিনি যখন প্রথমে বাংলার বাণী পত্রিকার সাথে যুক্ত হন তখন বাংলার বাণী ছিল সাপ্তাহিক, মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাপা হতো আগরতলা থেকে। পরে পত্রিকাটি প্রকাশ হয় দৈনিক হিসেবে।
নিবারণ রায় বলেন, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে শত শত যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়। ২৫ মার্চ রাতে বাঙালির ওপর হানাদারদের হামলা শুরু হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন নিবারণ রায়।
৩, ৪ ও ৫ এপ্রিল হানাদাররা নরসিংদী বাজার পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দেয়। এ সময় নিহত হয় ১৩ জন। এরপরেই শুরু হয় প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও চোরাগুপ্তা হামলা। তখন গোটা শহরে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে ক্যাপ্টেন সায়গলের নেতৃত্বের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি কোম্পানি হানাদারদের প্রতিরোধ করতে নরসিংদীতে আনসার ও পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়। তখন নিবারণ রায়সহ ছাত্রলীগ নেতা (পরে মেজর) সামসুল হুদা বাচ্চুর নেতৃত্বে আলী আকবর, নুরুল ইসলাম গেন্দু, মানিক লাল সাহা, হারাধন সাহা, ফজলুল কাদির সওদাগর, সুভাষ সাহা, আব্দুল গফুর ভূইয়া, কেশব লাল সাহা, খালেকুজ্জামান, আবুল হায়াৎ সরকার, হারুন অর রশিদ, আবুল কাসেম, জগদীশ আচার্য, স্বপন সাহা (পরে সাংবাদিক), মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (বর্তমান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী), আক্রাম হোসেন, আপেল মাহমুদ (সঙ্গীত শিল্পী) ও মেজবাহ উদ্দিন ইরানসহ আরো অনেকে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কোম্পানিকে স্বাগত জানান।
ওই সময় পাকবাহিনী পাঁচদোনায় হামলা চালিয়ে নরসিংদী টেলিফোন এক্সচেঞ্জ দখল করে নেয়। শুরু হয়ে যায় চোরাগুপ্তা হামলা। তখন নিবারণ বায় নরসিংদী থেকে পালিয়ে যান নবীনগর থানার একটি গ্রামে, তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে। এ সময় এলাকায় শুরু হয় গণডাকাতি। তিনি কোনাবন বর্ডার দিয়ে আগরতলা যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু যাওয়ার পথে পাকি বাহিনীর গাড়ির সামনে পড়েন। কিন্তু রাস্তার পাশের পাটখেতে লুকিয়ে জীবন রক্ষা করেন। পরে নৌকায় করে নদী পার হয়ে চলে যান আগরতলা। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে চলে যান আসামের শীতচর ও করিমগঞ্জ এলাকায়। ওই খানে দুই মাস অবস্থানের পর আবার চলে আসেন আগরতলায়। পরে আগরতলা থেকে চলে আসেন বাংলাদেশে। সব শেষে বাংলাদেশে এসে নরসিংদীর আলোকবালী মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্পে এসে যোগ দেন।
১৯৭৫ সালে ৪টি পত্রিকা বাদে বাংলার বাণী পত্রিকাসহ সব পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। তখন তিনি যোগ দেন নরসিংদী সংবাদদাতা হিসেবে দৈনিক ইত্তেফাকে। ১৯৮০ সালের দিকে নরসিংদীতে আলী হোসেন তালুকদারের স্ত্রী সিতারা বেগমকে অপহরণ করে আটকে রাখে সন্ত্রাসী ইমদুর লোকেরা। তৎকালীন নরসিংদীর তরুণ সাংবাদিক নিবারণ রায় ইত্তেফাক অফিসে খবরটি পাঠানোর জন্য কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। ইত্তেফাকে সংবাদটি ছাপা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইমদুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বর্তমানে নিবারণ রায়ের বয়স ৬৫। দেখলে বোঝাই যায় না তার বয়স এতোটা। সাংবাদিকতা করছেন গত ৪৫ বছর ধরে। নরসিংদী জেলা সংবাদদাতা হিসেবেই রয়েছেন দৈনিক ইত্তেফাকে দীর্ঘ সময় ধরে।
নরসিংদীর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নিবারণ রায় টানা ২২ বছর ধরে এই পদে ছিলেন। এছাড়া সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছেন কয়েকবার। তিনি প্রথম দিকে ৪/৫ জন সাংবাদিক নিয়ে নরসিংদী প্রেসক্লাব গঠন করেন।
0 comments:
Post a Comment