সরকার আদম আলী: ভুল ও অপচিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে মৃদুল নামে  ১০ বছরের এক স্কুল ছাত্র। নরসিংদীর গলাকাটা হাসপাতাল নামে পরিচিত নরসিংদী জেনারেল ও ডেন্টাল হাসপাতাল নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের মালিক ও ডাক্তাররা মৃদুলকে এই অকাল মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালের ডাক্তাররা মৃদুলকে দীর্ঘ ১৪ দিন চিকিৎসা দেয়ার পর তাকে ‘ক্লিনিক্যাললি ডেথ’ ঘোষণা দিয়ে তাকে পিতা-মাতার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে। ডাক্তাররা বলেছে ভুল চিকিৎসার কারণে মৃদুলের পেটের ভিতরে বৃহদান্ত্র ও ক্ষুদ্রান্ত্র ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেখানে আর কোন চিকিৎসা চালানোর সুযোগ নেই। যে কোন সময়ই মৃদুল মারা যেতে পারে। আজ শনিবার বিকেলে মৃদুলের পিতা খোকন ও আত্মীয়রা এ্যাম্বুলেন্সে করে মৃদুলের অসাড় দেহ নিয়ে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে এসে দাঁড়ায়। সেখানে মৃদুলের পিতা খোকন ও অন্যান্য আত্মীয়রা কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের জানায় যে, শিবপুর উপজেলার ভরতেরকান্দী গ্রামের অটোচালক খোকনের পুত্র মৃদুল ভরতেরকান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। গত  ২৭ মে শনিবার মৃদুল মারাত্মক পেট ব্যথায় আক্রান্ত হয়। সাথে তার বমিও হতে থাকে। এই অবস্থায় মৃদুলের পিতামাতা তাকে ভরতেরকান্দী বাজারে সালাম ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে যায়। সেখানে তার পেট ব্যথা কমানোর জন্য ডাক্তার তাকে ব্যাথানাশক ট্যাবলেট খাওয়ায়। এতে তার পেট ব্যথা আরো বেড়ে যায় এবং সে রক্ত বমি করতে থাকে। এই অবস্থায় একই দিন রাতে জনৈক বাতেন দালালের মাধ্যমে তাকে সালাম ডাক্তারের পরামর্শে তারই নিজ মালিকানাধীন বেসরকারি ক্লিনিক নরসিংদী জেনারেল ও ডেন্টাল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে নিয়ে যাবার পর মৃদুলকে দেখে কর্তব্যরত সার্জন ডা. আসাদ জানান যে, তাৎক্ষণিকভাবে তার পেটে জরুরী অস্ত্রোপচার বা অপারেশন করা না হলে মৃদুলকে বাঁচানো যাবে না। ডাক্তারের কথায় মৃদুলের পিতা-মাতা ২৫ হাজার টাকা রফাদফায় অপারেশনে রাজি হয়। এরপর রাতেই ডাক্তার আসাদ তাৎক্ষণিকভাবে মৃদুলকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে তার পেটে অস্ত্রোপচার করে সেলাই করে দেয়। পরদিন সকালে জ্ঞান ফিরার পর তার অবস্থা আরো সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় মৃদুলের নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকলে ডা. আসাদ ও সালাম ডাক্তারের পরামর্শে তাকে জরুরী ভিত্তিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে ভর্তি করার পর কর্তব্যরত ডাক্তাররা পরীক্ষা নিরিক্ষা করে জানায় যে, পেট ব্যাথা কমানোর জন্য এনালজেসিক জাতীয় ব্যাথানাশক ঔষধ প্রয়োগের কারণে মৃদুলের অন্ত্র বা নারী-ভূরিতে একাধিক পারপোরেশন বা ক্ষতের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে জরুরী ভিত্তিতে অপারেশন করা হলেও পারপোরেশনের সব জায়গায় অপারেশন হয়নি। শুধু তাই নয় সেলাই’র কাজে যথাযথ নিয়ম না মানার কারণে কাটা ছেড়া জায়গা থেকেও রক্তপাত হতে থাকে। অতিরিক্ত রক্তাপাতের কারণে মৃদুল আশংঙ্কাজনকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় তার চিকিৎসা দেয়া কঠিণ হয়ে পড়ে। এরপরও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে দীর্ঘ ১৪ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ার পর সেখানকার ডাক্তাররা তাকে ক্লিনিক্যাললি ডেথ ঘোষণা করে তাকে বাড়ি নিয়ে যাবার পরামর্শ দেন। এই অবস্থায় মৃদুলের পিতা-মাতা আত্মীয়রা তাকে হাসপাতাল থেকে ভরতেরকান্দী গ্রামে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। পথিমধ্যে তারা প্রেসক্লাবে গিয়ে সাংবাদিকদেরকে ঘটনা অবহিত করে।
উল্লেখ্য যে, নরসিংদী ডেন্টাল ও জেনারেল হাসপাতালটিতে ইত:পূর্বেও কয়েকটি ভুল চিকিৎসা জনিত দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ পর্যন্ত ২ জন গর্ভবতী মহিলা অপারেশন করতে গিয়ে হাতুড়েপনার কারণে মারা যায়। ভরতেরকান্দী গ্রামের মেয়ে জনৈক বেনুর কন্যা ইয়াসমিন হাসপাতালে সিজার অপারেশন করাতে গেলে ডাক্তাররা পেটের ভিতরে নেকড়া রেখেই পেট সেলাই করে দেয়। এছাড়াও আছমা বেগম (২০) গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া এলাকার আব্দুর রহিমের স্ত্রী ও রায়পুরা উপজেলার হাটুভাংঙ্গার আ: রহমানের কন্যার ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তৎকালীন সময়ে হাসপাতালের পরিচালক রহমুতল্লাহসহ দুইজনকে আটক করে পুলিশ।
এমন বহুসংখ্যক অভিযোগ রয়েছে নরসিংদী ডেন্টাল ও জেনারেল হাসপাতালের বিরুদ্ধে। কিন্তু নরসিংদীর স্বাস্থ্য বিভাগ এই ঘাতক ডেন্টাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।


0 comments:

Post a Comment