স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীতে এক সময় অনেক পতিত জমি ছিল। কিন্তু এখন আর নেই। এ জমিতে চাষ হচ্ছে আনাসর। কোথাও  কোথাও বাড়ির আঙিনা ও বিভিন্ন ফল-ফলাদির বাগানের ফাঁকা জায়গায় চাষ হচ্ছে এ জাতের আনারস। এ এলাকার লাল মাটি জলডুগি বা হানিকুইন নামে দেশীয় জাতের আনারস চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ফলন ভালো এবং বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় নতুন নতুন বাগান গড়ে উঠছে এ এলাকায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও আনারস চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১০ বছর আগেও জেলার পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের রাবান, বরাব, সাতটেকিয়া, কুড়াইতলী ও বেলাবো উপজেলার পাটুলি, বাজনাব ও আমলাবো ইউনিয়নে অনেক জমি পড়ে থাকতো। কোথাও কোথাও কাঁঠালসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলের বাগান করা হলেও বাগানের ভেতর জমি ফাঁকাই থাকতো। প্রায় এক ১ যুগ আগে এসব জমিতে ব্যক্তি উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা হয় আনারস চাষ। এ ফলের ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন আনারসের চাষ বাড়তে থাকে। খেতে সুস্বাদু এই আনারসের চাহিদা থাকায় দামও পাওয়া যায় ভালো। নরসিংদীতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে আনারসের। লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই জেলার আনারস বাগানের সংখ্যা বাড়ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর নরসিংদী জেলায় ৩০০ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৫৩ হেক্টর বেশি। সাধারণত পাহাড়ি লাল এটেল মাটি এই আনারস চাষের উপযোগী।
আকারে ছোট হলেও সুস্বাদু হওয়ায় দেশজুড়ে রয়েছে এই আনারসের খ্যাতি। দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে নরসিংদীর আনারস। সাতটেকিয়া গ্রামের চন্দন সেন বলেন, ‘একটা সময় কাঁঠাল, লিচুসহ বিভিন্ন ফলের বাগানের মধ্যে জমি ফাঁকাই থাকতো। এখন এসব জমিতে আনারসের চাষ করা হয়। ফলনের পাশাপাশি দামও সন্তোষজনক।’
রাবান গ্রামের আনারস চাষি প্রদীপ রায় কাকন বলেন, ‘আনারস চাষে পুঁজির তুলনায় লাভ বেশি পাওয়া যায়। অন্যান্য ফসলের মতো নিয়মিতভাবে শ্রম সার কীটনাশকের প্রয়োজন পড়ে না। প্রতি পিস আনারস ১৫-২০ টাকায় জমি থেকেই কিনে নিয়ে যায় পাইকারী ক্রেতারা।’
কাটাবেড় গ্রামের নিতিশ মিত্র বলেন, ‘অন্যান্য ফলসহ আনারসের জন্য রাবান এলাকার সুনাম আছে। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় এখানকার আনারসের চাহিদা বেশি।’
বেলাব উপজেলার টঙ্গিরটেক গ্রামের আনারস চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আনারসকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে বাজার গড়ে ওঠেছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ক্রেতারা এসে এখান থেকে আনারস কিনে নিয়ে যায়। আবার অনেক ক্রেতারা সরাসরি আনারসের বাগান কিনে নেন।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নরসিংদীর উপ-পরিচালক লতাফত হোসেন বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আনারসের চাষ বৃদ্ধিতে চাষিদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রতি বছরই নতুন নতুন আনারস বাগান গড়ে উঠছে। এ বছর হেক্টর প্রতি ১০ মেট্রিক টন হিসাবে মোট সাড়ে ৩ হাজার মেট্রিক টন আনারস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে এসব আনারস সংরক্ষণ করা গেলে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।


0 comments:

Post a Comment