সরকার আদম আলী: ২ লক্ষ টাকা জরিমানা ও প্রকাশ্য শালিস দরবারে জুতা পেটা রায়’র মধ্য দিয়ে মীমাংসিত হয়েছে রায়পুরার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের নলবাটা গ্রামের স্কুল ছাত্রী সেই পঞ্চদর্শী ধর্ষণ প্রচেষ্টার ঘটনা।
আজ শনিবার আমিরগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান নলবাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এলাকার মেম্বার, আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে শতশত মানুষের উপস্থিতিতে ধর্ষণ প্রচেষ্টার এই শালিসি রায় ঘোষণা করেছেন। রায়ের পর ধর্ষণ প্রচেষ্টাকারী আলম ভূইয়াকে তার বড় ভাই রাজু ভূইয়া প্রকাশ্যে জুতা পেটা করে রায় কার্যকর করেছে। দরবারের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে, চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন জানান, আইনগতভাবে এই সালিশ দরবারের কোন ভিত্তি না থাকলেও নির্যাতিতা পঞ্চদশী, তার পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী এই রায় মেনে নিয়েছে এবং সালিশ দরবারের বিচারকদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
জানা গেছে, রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের নলবাটা গ্রামের বিদেশ প্রবাসীর পঞ্চদশী কণ্যা স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় কোচিং সেন্টার থেকে বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ বৃষ্টি নেমে গেলে মেয়েটি নলবাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। এ সময় একই গ্রামের মৃত শাহজাহানের পুত্র আলম মেয়েটিকে একা পেয়ে তাকে মুখ চেপে ধরে। এ সময় মেয়েটি তাকে বারবার বলতে থাকে আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি, আপনি আমার সাথে এমন করছেন কেন। এ কথা বলে মেয়েটি চিৎকার করতে থাকলে পাষ- আলম তার উড়না দিয়ে মেয়েটির নাক-মুখ নাইট করে বেধে  জোরপূর্বক পার্শ্ববর্তী একটি ঝোপের দিকে টেনে হেঁচড়ে নিতে থাকে। এ অবস্থায় একটি অজ্ঞাতনামা লোক ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে আসতে থাকলে দুষ্ট আলম মেয়েটিকে ছেড়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে মেয়েটি চিৎকার করতে থাকলে আশেপাশের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যায়। নির্যাতিতা মেয়েটি সাংবাদিকদের জানান যে, আলম তাকে ধর্ষণ নয়, তাকে নাক-মুখ বেধে হত্যা করারও চেষ্টা করেছিল। এ সময় এলাকার লোকজন জানান, টিজার আলমের বড় ভাই কাইয়ুম উদ্দিন ১৪ বছর পূর্বে সোলেমা নামে এক মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করে। এই ঘটনায় কাইয়ুম উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পরে ঘটনাটি মীমাংসা হয়ে যায়।
এই ঘটনা জানাজানি হবার পর মেয়েটির মা স্থানীয় ইউপি মেম্বার গোলজার হোসেনের সহযোগিতায় আমিরগঞ্জ ফাঁড়িতে গিয়ে পুলিশকে ঘটনা অবহিত করে। এ সময় ইভটিজার আলমের বড় ভাই ব্যবসায়ি রাজু মোবাইল ফোনে দারোগা আমিনুলের সাথে কথা বলে। রাজুর ফোন পেয়ে নির্যাতিতা মেয়েটির মাকে ফাঁড়িতে রেখেই ইনচার্জ আমিনুল হক ঘটনা তদন্তে মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে চলে যান, সেখানে মেয়ের মুখ থেকে ঘটনা শুনেন। এ সময় ঘটনাস্থলে স্থানীয় মেম্বার গোলজার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। তদন্তকালে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হবার পরও ইনাচার্জ আমিনুল হক মামলা না নিয়ে, টিজার আলমকে গ্রেফতার না করে ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার জন্য বাড়ির লোকজন ও মেম্বারকে নির্দেশ দিয়ে চলে আসেন। বলে আসেন আলমের বড় ভাই রাজু ঢাকা আসছে, সে এসে ঘটনা মীমাংসা করবে। এ ব্যাপারে দারোগা আমিনুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। বলেন, এটা তেমন কিছু না, মেয়েটির মুখ চেপে ধরেছিল, পরে আর কিছু হয় নি। মেয়েটি ছুটে চলে গেছে। এই ঘটনা দৈনিক গ্রামীণ দর্পণ পত্রিকায় প্রকাশিত হবার পর এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। শনিবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন এ ব্যাপারে শালিশ দরবারে বসে ঘটনা শুনেন এবং উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনানী শেষে ১১ সদস্যের জুরি বোর্ডের মাধ্যমে টিজার আলমকে ২ লাখ টাকা জরিমানা ও প্রকাশ্য দরবারে জুতা পেটার রায় ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মেয়েটির বাবা বর্তমান বিদেশে রয়েছেন। বাড়ির কেউ মামলা করার সাহস পাচ্ছে না বলে আমরা এলাকার ইউপি মেম্বার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে সালিশ দরবারের মাধ্যমে ঘটনার মীমাংসা দিয়েছি।

0 comments:

Post a Comment