22:03
0
শান্ত বনিক : নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়েনের চর কাশিমনগরের মানবকল্যাণে নিবেদিত এক প্রাণের নাম মেহেরুন্নেসা। যিনি জনসেবা ও সামাজিক উন্নয়নের স্বীকৃতি হিসেবে একাধিকবার পেয়েছেন স্বর্ণপদক।
চর কাশিমনগর গ্রামের দরিদ্র কৃষক মোঃ আব্বাস আলী ও সাহেরা বিবির তিন ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে মেহেরুন্নেছা সবার বড়। ১৯৫১ সালে নবম শ্রেণীতে চূড়ান্ত পরীক্ষা দেয়ার পর অভাবের কারণে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। ঘরে বসে টিউশনি আর সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন মেহেরুন্নেসা। ষাটের দশকের প্রথম দিকে একই গ্রামের দিনমজুর মোঃ ফালু মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় তার। শুরু হয় মেহেরুন্নেসার সংগ্রামী জীবন। ১৯৮০ সালে আনসার ভিডিপিতে যোগ দিয়ে ৮০ টাকা বেতনের চাকরি শুরু করেন তিনি। তিনি এ পর্যন্ত এলাকার ৮৭৬ জন নারীকে আনসার-ভিডিপি সদস্য করেছেন। নারী নেতৃত্বে অবদানের জন্য ১৯৯২ সালে মেহেরুন্নেসাকে আনসার ও ভিডিপি অধিদফতর স্বর্ণপদক দেয়।
তার হাতে পদক তুলে দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ২০০০ সালেও জনসেবা ও সামাজিক উন্নয়নে অবদানের জন্য ওই অধিদফতরের স্বর্ণপদক তার হাতে তুলে দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ১৯৮৫ সালে সামাজিক উন্নয়নের অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি স্বর্ণপদক পান তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছ থেকে। ২০০৭ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় তাকে উপজেলার শ্রেষ্ঠ স্বেচ্ছাসেবী নির্বাচিত করে। এছাড়া তিনি চারবার আনসার ও ভিডিপির রৌপ্যপদক লাভ করেন। আর এসব পদক বিক্রি করে গ্রামে বানিয়েছিলেন অবৈতনিক বিদ্যালয়। এলাকার শিক্ষা স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়নে মেহেরুন্নেসার অবদানের জন্য গর্বিত এলাকাবাসীও। দিনভর ছুটাছুটির পর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে হারিকেনের আলোয় এক ঘণ্টা ক্লাস নেন।
শিক্ষার্থী থাকে ১৫ থেকে ২০ জন। এ পর্যন্ত ৫ শতাধিক নিরক্ষর নারী-পুরুষ এখানে শিক্ষা নিয়েছেন।  শিক্ষার্থীদের বই, খাতা, কলমসহ বিভিন্ন উপকরণ তিনিই কিনে দেন। কারও কোনো সহযোগিতা পান না প্রয়োজনে বাকি দুটি স্বর্ণপদক বেঁচে বিদ্যালয় চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি। এ পর্যন্ত এলাকার অর্ধশত পুরুষ আর কয়েক হাজার নারী স্থায়ী জন্মনিরোধ ব্যবস্থা করিয়েছেন। শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য, নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিয়েও কাজ করছেন তিনি। বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান রতন মেহেরুন্নেসার অনেক কাজে উদাহরণ টেনে বলেন, তিনি আমাদের মাদারতেরেসা। মেহেরুন্নেসাকে অনুকরণ করে যদি এলাকার অন্যরাও সামাজিক উন্নয়নে এগিয়ে আসত তাহলে সমাজের আরও পরিবর্তন ঘটত।
এই আলোকিত ও নিবেদিত প্রাণ মহীয়সী নারী চলতি বছরের ৯ই ফেব্র“য়ারী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ  করেন। তার মৃতুতে এখনও চলছে শোকের ছায়া।

0 comments:

Post a Comment