স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীতে ১৩২ কেভি ঘোড়াশাল-আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের নীচে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। নরসিংদী শহরতলীর ভেলানগর-পলাশ সড়কে সৌরভ টেক্সটাইল নামে শিল্প প্রতিষ্ঠানটি বেশকিছুদিন ধরে এই ভবন নির্মাণ কাজ চালিয়ে গেলেও টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের। ফলে যেকোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, নরসিংদী সদরের ভেলানগর-পলাশ সড়কের অবস্থিত সৌরভ টেক্সটাইল নামে শিল্প প্রতিষ্ঠানটির মালিক স্থানীয় আক্তার আলম। এই কারখানাটির জায়গার উপর দিয়ে নির্মাণ হয়েছে ১৩২ কেভি ঘোড়াশাল-আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। সঞ্চালন লাইনটির নীচে দীর্ঘদিন ধরে একটি একতলা ভবন থাকলেও এখন সেটি রূপ নিচ্ছে বহুতল ভবনে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের নীচে বহুতল ভবন বা স্থাপনা নির্মাণ করা নিষেধ। কিন্তু এখানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে ৪ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, সঞ্চালন লাইনের নীচে ভবন নির্মাণের কাজ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় রাজমিস্ত্রিদের বাড়তি মজুরির লোভ দেখিয়ে এই ভবন নির্মাণের কাজে লাগায় সৌরভ টেক্সটাইল মিল কর্তৃপক্ষ। এতে যে কোন মুহুর্তে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন এলাকাবাসী। এরই মধ্যে এই ভবনের ৪ তলার নির্মাণ কাজ শেষ করে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে প্লাস্টারের কাজ। ভবনটির নীচতলায় রয়েছে সৌরভ টেক্সটাইল নামে একটি রপ্তানীমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান। যাতে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন বেশ কিছু সংখ্যক শ্রমিক। এই ভবনটি সঞ্চালন লাইনের তার ছুঁই ছুঁই অবস্থায় খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে ভবন নির্মাণকাল অথবা পরবর্তীতে ভবন ব্যবহারের সময় যে কোন মুহুর্তে স্পার্কিং-ফ্ল্যাশিং হয়ে আশপাশের সংলগ্ন বাড়িঘরে অগ্নিকা- ঘটতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির পাশেই রয়েছে একই মালিকের অপর একটি বহুতল ভবন।
এ ব্যাপারে সৌরভ টেক্সটাইল ও ভবনটির মালিক আক্তার আলম এর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার জায়গায় আমি ভবন নির্মাণ করেছি, এটা নিয়ে আপনারা (সাংবাদিকরা) মাথা ঘামাবেন না। আমাকে আমার কাজ করতে দেন, আপনারা আপনাদের কাজ করেন। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই করেছি। তারা (বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ) আমাকে বলেছে, সাবধানে কাজ করার জন্য, আমি সাবধানে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করেছি।
চিনিশপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম.এন জামান বলেন, জায়গাটি যে গ্রীড টাওয়ারের নীচে সেটি আমার জানা ছিল না। এরই মধ্যে পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী আমাকে চিঠি দিয়ে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছে। সৌরভ টেক্সটাইল মিলের মালিক ভুল তথ্য দিয়ে ভবন নির্মাণের অনুমতি নিয়েছিলো। আমি এই ভবনের অনুমতি বাতিল করে কয়েকদিনের মধ্যে তাকে নোটিশ পাঠাবো।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এর সহকারী ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) এবিএম বদরুদ্দোজা খান সাংবাদিকদের বলেন, সঞ্চালন লাইনের নীচে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করা সম্পূর্ণ নিষেধ। দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য নিয়ম অনুযায়ী লাইন থেকে কমপক্ষে ১৫ মিটার দূরত্বে স্থাপনা থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে নরসিংদীতে যদি কেউ বহুতল ভবন তৈরি করে নিয়ম ভঙ্গ করে থাকেন তাহলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


0 comments:

Post a Comment