মাজেদুল ইসলাম, আঞ্চলিক প্রতিনিধি: ঈদের আরো ১০/১১ দিন বাকি থাকলেও পরিবারের সকলের মধ্যে ঈদ-আনন্দ ভাগাভাগি করার মানসে ইতোমধ্যেই ঈদের নকসী পিঠা তৈরীর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নরসিংদীর গ্রামাঞ্চলের নারী, তরুণী ও কুলবালারা।
জেলার রায়পুরা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ঘরে-ঘরে খবর নিয়ে জানা গেছে, সাংসারিক নিয়মিত কাজ-কর্ম বাদে হাতে বাড়তি তেমন কোন কাজ না থাকায় এবার গ্রামীণ গৃহবধু, কণ্যা, শ^াশুড়ী, দাদী, চাচী, পুত্রবধূরা রমজানের শুরুতেই গ্রাম-বাংলার চিরায়িত ঐতিহ্য ঈদের নকসী পিঠা সহ অন্যান্য রকমারি পিঠা তৈরীর কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। বৃহস্পতিবার ১৯ রোজা পর্যন্ত গ্রামের অধিকাংশ মহিলারাই ঈদের প্রয়োজনীয় বাহারী নকসী পিঠা তৈরীর কাজ সম্পন্ন করে ফেলেছেন। তাদের তৈরী পিঠাগুলোর মধ্যে রয়েছে নকসী পিঠা, পাতা পিঠা, শামুক পিঠা, ঝিনুক পিঠা, গোলাপ ফুল পিঠা, ঝিকিমিকি পিঠা, টিপটপ পিঠা, ঝুড়ি পিঠা, সিরিঞ্জ পিঠা, সন্দেশ পিঠা ইত্যাদি। এসব পিঠা তৈরী করতে বেলুন, পিড়ি, জলচৌকি, কাটার, খেঁজুর কাঁটা অথবা সূঁই, তেল, কলা পাতা, চালুন, কুলা, থালা-বাসন প্রভৃতি সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়। আতব চাল কুটে গুড়ো করে প্রথমে গুড়োগুলোকে গরম পানিতে সেদ্ধ করে কাঁই তৈরী করা হয়। পরে কাঁই কেটে লুট বানানো হয়। অত:পর লুটগুলোকে থালা ও কলা পাতার উপর রেখে তৈল মৈথুন করে তার উপরে মনের মাধূরী মিশিয়ে খেঁজুর কাঁটা অথবা সূঁই দিয়ে বিভিন্ন ধরণের নকসী আঁকা হয়। অঙ্কিত নকসীর ফাঁকে ফাঁকে কাটার বা সূঁই দিয়ে খাঁজ কেটে কেটে অপ্রয়োজনীয় কাঁইগুলো তুলে ফেললেই ফুলপিঠা বা নকসী পিঠা তৈরী হয়ে যায়। পরবর্তীতে সংরক্ষণের জন্য কিছু কাঁচা পিঠা কেউ কেউ রৌদ্রে শুকিয়ে রাখেন। আবার কেউবা গরম তেলে ভেঁজে রাখেন। গৃহিনীরা এগুলোকে ঈদের আগের দিন রাতে অথবা ঈদের দিন সকালে চিনি অথবা গুড়ের গরম শিরার মধ্যে ডুবিয়ে খাবারের উপযোগী করে পরিবেশন করেন। ঈদের দিন পরিবারের সকলে পরম আনন্দে চমকপ্রদ ও মুখরোচক এ পিঠাগুলো ভোজন করে ঈদ-আনন্দ উদ্যাপন করে থাকে। কিছু পিঠা রেখে দেওয়া হয় পরবর্তীতে বেয়াই-বেয়াইন, কন্যা-জামাতা তথা অতিথি আপ্যায়নের জন্য। রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ ইউনিয়নের শেরপুর কান্দাপাড়াস্থ হযরত আলীর বাড়ি থেকে পিঠা তৈরীর চিত্র ধারণ করা হয়েছে।


0 comments:

Post a Comment