10:52
0
‘মো. মোশাররফ হোসেন সরকার’

০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ : স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী এদেশিয় দোসর দালালদের সহযোগিতায় বাঙালি নারীদের যখন-তখন, যেখান-সেখান থেকে অনধিকার প্রবেশ করে ৭ থেকে ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত নারীদের অপহরণ, ধর্ষণ ও নির্বিচারে নির্যাতন, খুন ও গুম করে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তাদের একজন বয়স্ক বীরাঙ্গনা হাসিনা বেগম। পিতা মরহুম রহম আলী, মা মরহুম রইছার মা, স্বামী আক্কাছ আলী। গ্রাম ও ডাকঘর: আশারামপুর, উপজেলা: রায়পুরা, জেলা: নরসিংদীতে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম নি¤œবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে তার বয়স আনুমানিক ৪৫ বছর। গায়ের রং ফর্সা, সুন্দর, ছিপছিপে লম্বা গড়নের একজন পূর্ণ বয়স্ক গৃহিণী। মুক্তিযুদ্ধকালীন বীরাঙ্গনা হাসিনা বেগমের ২টি বসতঘর অন্যান্য মালামাল (গরু-ছাগল) ইত্যাদি আগুনে পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে। একই সময় (সঠিক তারিখ জানা যায়নি) ৪ জন পাকিস্তানি আর্মি হাসিনাকে বন্দি করে বাড়ির পাশে প্রকাশ্যে শাড়ি, ব্লাউজ টেনে হিছড়ে পালাক্রমে ধর্ষণ নির্যাতন করে। এতে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত ও লজ্জিত হয়। সারা জীবন সমাজের চোখে তিনি অত্যন্ত নিন্দনীয়, নিগৃহীত ও লাঞ্ছিত জীবন যাপন করছে। বর্তমানে বাড়িঘর, জায়গা জমি বলতে কিছুই নেই। ভাসমান অবস্থায় স্বামী সন্তান নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছে। জীবন ও বাঁচার তাগিদে স্বামী আক্কাছ আলী, স্ত্রী বীরাঙ্গনা হাসিনা বেগম উভয়েই ভিক্ষা করে দিনাতিপাত করছেন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, স্বাধীনতা যুদ্ধে তার পরিবারের অবদানের মধ্যে ছেলে মুকুল গুলিবিদ্ধ (আহত) ২ কণ্যা ধর্ষিতা। বীরাঙ্গনা রেণু ও বীরাঙ্গনা জোসনা বেগম প্রমূখ। বীরাঙ্গনা হাসিনা বেগমের পরিবারের ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। যাহা পোষাবার নয়। এই পরিবারের সাহায্য-সহযোগিতায় দীর্ঘ ৪৫ বছর কেউ এগিয়ে আসেনি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক, বেদনাদায়ক ও পরিতাপের বিষয়। যুদ্ধকালীন এই পরিবারের ত্যাগ, অবদান, সম্ভ্রমহানী, রক্তদান স্বাধীনতার পথকে বেগবান করেছে। আমরা এই পরিবারবর্গকে স্বাধীনতা সংগ্রামের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার, আওয়ামীলীগ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বীরাঙ্গনা নারীদের, নারী মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করছে। সেই হিসেবে বীরাঙ্গনা হাসিনা বেগম রণাঙ্গনের একজন প্রকৃত বীরাঙ্গনা। তার বিষয়টি সরেজমিনে যাচাই বাছাই করে, নারী মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি করার জন্য স্থানীয় সচেতন মহল দাবি জানিয়ে আসছে। হাসিনা বেগমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সাক্ষাৎকালে তার গুলিবিদ্ধ ছেলে, ভূমিহীন বকুল উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাতের তারিখ: ০৩/০২/২০১৭ইং।
-লেখক: সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক

0 comments:

Post a Comment