10:53
0
 ‘মো. মোশাররফ হোসেন সরকার’

০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ : স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী এদেশিয় দোসর-দালালদের সহযোগিতায় বাঙালি নারীদের অপহরণ, ধর্ষণ ও নির্বিচারে নির্যাতন, খুন এবং গুম করে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তাদের একজন বীরাঙ্গনা ফরিদা বেগম। পিতা মরহুম আলমাছ আলী বেপারী, মা মরহুম করফুলের নেছা। গ্রাম: শেরপুর, ডাকঘর: রাধাগঞ্জ বাজার, উপজেলা: রায়পুরা, জেলা: নরিসংদীতে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৫৯ খ্রি. জন্মগ্রহণ করেন। তার গাঁয়ের রং শ্যামলা, লম্বা গড়নের ৫ম শ্রেণি পড়–য়া অবিবাহিত একজন স্পষ্টবাদী যুবতি। ২৫/০৭/১৯৭১ তারিখের হাটুভাঙ্গা একযুদ্ধে পাকবাহিনী পরাজিত হয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার লক্ষ্যে পরের দিন পার্শ্ববর্তী শেরপুর গ্রামে অনাধিকার প্রবেশ করে আগুন দিয়ে বাড়ি-ঘর পুঁড়িয়ে দেয়। প্রথমেই তার বাবার বাড়ি (আলমাছ আলী বেপারীর বাড়িতে) আগুন দিয়ে ছয়টি ঘর অন্যান্য মালামাল পুঁড়িয়ের দেয়। এছাড়া ফরিদার আপন ফুফাতু ভাই আব্দুল মোতালিবকে গুলি করে হত্যা করে। ফুফাতু বোন আমিনা বেগমকে বন্দি করে ধর্ষণ করে। এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, মরহুম আলমাছ আলী বেপারির তিন কণ্যা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক নির্যাতিতা ও ধর্ষিতা হয়েছে। মেয়েরা হল বীরাঙ্গনা হেলেনা, বীরাঙ্গনা মিনারা ও বীরাঙ্গনা ফরিদা বেগম প্রমুখ। এছাড়াও ২৪/০৭/১৯৭১ তারিখে ফরিদা বেগম, মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানিদের মধ্যে এক ভয়াবহ লড়াইয়ের সেলের প্রিন্টারে মারাত্মক ভাবে রক্তাক্ত জখম হয়েছে। সেই সাথে নিজ বাড়িতে পাকিস্তানি আর্মিদের নিকট বন্দি হয়ে ধর্ষিতা এবং সর্বশান্ত হয়েছে। এত বড় ক্ষতির শিকার নরসিংদীতে অন্য কোন পরিবারে হয়েছি কিনা আমার জানা নেই। এই পরিবারের সহযোগিতায় দীর্ঘ ৪৫ বছর কেউ কোন খোঁজ-খবরে এগিয়ে আসেনি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। স্বাধীনতাযুদ্ধে এই পরিবারের অবদান, ত্যাগ, রক্তদান ও ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সর্বোপরি মরহুম আলমাছ আলী বেপারির সুসন্তান মো. মুসলেম মেম্বার, রণাঙ্গনের একজন সাহসি মুক্তিযোদ্ধা। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার, আওয়ামীলীগ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনার ঘোষণা, বীরাঙ্গনা নারীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে খেতাব প্রদান করছে। সেই মোতাবেক ফরিদা বেগম রণাঙ্গনের একজন নির্যাতিতা, ধর্ষিতা ও গুলিবিদ্ধ নারী। তাকে নারী মুক্তিযোদ্ধা খেতাব প্রদানের জন্য তার পরিবার থেকে সবিনয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন। ফরিদা বেগমের সাক্ষাতকালে যোদ্ধহত আব্দুল বাছেদ উপস্থিত ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন অত্র শেরপুর গ্রামের ৫ জন নীরিহ মানুষকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। ৭০/৮০ জনের ১৫০ টি বাড়ি ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এছাড়াও ৮ জন নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে বিশাল ক্ষতি করেছে, যাহা পোষাবার নয়। বীরাঙ্গনাদের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
-লেখক: সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক


0 comments:

Post a Comment