১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ : এড. মো. আসাদোজ্জামান সদ্য নির্বাচিত নরসিংদী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। গত ১ ফেব্রুয়ারি তিনি সবাইকে কাঁদিয়ে চিরদিনের মত না ফেরার দেশে চলে গেছেন। আজকের এই সময়ে যারা নিজের আলো দিয়ে আমাদের পথ দেখাতেন, সেই বাতিগুলো আস্তে-আস্তে নিভে যাচ্ছে। আসাদোজ্জামান সাহেবের মত আলোকিত মানুষ যখন আমাদের বেশি করে দরকার সেই মূহুর্তে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। সবাইকেই একদিন চলে যেতে হবে কিন্ত কিছু চলে যাওয়া মেনে নিতে কষ্ট হয়, বিশেষ করে আসাদোজ্জামান সাহেব এর মত মানুষদের। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৭২ বছর। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একেবারে তৃণমূল থেকে অনেক লড়াই সংগ্রাম করে আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পরে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটি শিক্ষাজীবন শেষকরে কিছুকাল সোনারগাঁ কলেজে অধ্যাপনা করেন, পরে নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত মতিউল্লা ভূইয়া হাই স্কুলে কিছুকাল প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে নরসিংদী এসে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। তিনি নরসিংদী আইনজীবি সমিতির প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ও দুই দুই বার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এবং প্রায় দীর্ঘ দুই যুগ ধরে সফলভাবে আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মনোনিত হয়ে সততা ও নিষ্ঠার সাথে ৫ বছর জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জেলা পরিষদের চেয়াম্যান নির্বাচিত হন। সারাজীবন ধরে তিনি মানব কল্যাণে কাজ করেছেন। শিক্ষকতা কালীন সময়ে তিনি বহু গরীব মেধাবী ছাত্রকে বিনামূল্যে পড়িয়েছেন, নিজের টাকা দিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। আইন পেশায় থাকাকালীন সময়েও বহু গরীব অসহায় মানুষকে বিনামূল্যে আইনি সেবা প্রদান করেছেন। ৫ বছর জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব পালনকালে কোটি কোটি টাকার কাজ করেছেন, এসএসসি জিপিএ ৫ প্রাপ্ত ছাত্রদের মেধাবৃত্তি, দরিদ্র মহিলাদের সেলাই মেশিন বিতরণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার বিতরণ, মসজিদ, মন্দির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ্ঈদগাহ, গোরস্থান, শ্মশান ইত্যাদি উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন। এত কাজ করেছেন, এত অনুদান দিয়েছেন কিন্তু কেউ তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে পারেন নি। তিনি নির্লোভ স্বভাবের ও আত্মপ্রচার বিমুখ মানুষ ছিলেন। আসাদোজ্জামান দলের চেয়ারম্যান হয়েও দল মতের উর্ধ্বে ওঠে সব দলের সব মতের মানুষের জন্য কাজ করেছেন। এইভাবে দল মতের উর্ধ্বে ওঠে হয়ে ওঠেছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় সার্বজনীন একজন মানুষ। সরকারী দল, বিরোধীদল, হিন্দু মুসলমান বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ তাঁর কাছে ছুটে আসত সহযোগিতার আশায়, অভয় ও আশ্রয়ের আশায়, তিনি কখনো কাউকেই ফিরিয়ে দিতেন না। তিনি ছিলেন সাদা মনের মানুষ, নিরিবিলি মানুষ, অতিভদ্র ও বিণয়ী মানুষ। মারামারি, কাটাকাটি, ঝগড়া বিবাদ দলীয় কোন্দল তিনি পছন্দ করতেন না। নরসিংদীর আওয়ামী রাজনীতি দুই শিবিরে বিভক্ত ছিল, তিনি সবসময় চেষ্টা করেছেন সবাইকে নিয়ে একই ধারায় মিলিত হতে কিন্তু তিনি জীবিত অবস্থায় তা করে যেতে পারেননি কিন্ত আল্লাহর কি বিচিত্র লীলা তিনি তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তা করে গেছেন।
আসাদোজ্জামান ছিলেন নীতিবান ও আদর্শবান একজন মানুষ। নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে তিনি কখনো একচুল পরিমাণ পর্যন্ত আপোষ করেননি, এই জন্য নিজদল ও দলের বাইরে তাকে অনেক অপমান অপবাদ সইতে হয়েছে কিন্তু নিজে অপমানিত হলেও কাউকেই তিনি অপমান করেন নি কখনো। এইভাবেই তিনি সর্ব মহলে হয়ে উঠেছিলেন শ্রদ্ধার মানুষ, বিশ্বাসের মানুষ, ভালবাসার মানুষ। তাই তাঁর জানাযায় সব দলের সব ধর্মের মানুষের ঢল নেমেছিল। আসাদোজ্জামান আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার কাজ ও আদর্শ শুধু নরসিংদীর মানুষকে নয় সারাদেশের মানুষকে প্রেরণা জোগাবে যুগযুগ ধরে। মানুষ মন্ত্রী হয়ে, প্রধানমন্ত্রী হয়ে, এমপি হয়ে, জেলা চেয়ারম্যান হয়ে, মেয়র হয়ে জন্মায় না, মানুষ জন্মায় মানুষ হয়ে মানুষ হিসেবে। সুতরাং জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষকে মানুষ হিসেবেই থাকা প্রয়োজন। আসাদোজ্জামান অন্যায় ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে মানবতার যে মশাল জ্বেলে গেছেন সেটি এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব উত্তর প্রজন্মের। তার ভালবাসা ও দেশপ্রেমের আদর্শ নতুন প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপ্ত হোক এই প্রার্থনা করি। -লেখক: শাহ্ আলম, সহ-সভাপতি, স্বজন সমাবেশ, নরসিংদী।
0 comments:
Post a Comment