09:24
0
সরকার আদম আলী, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ : ‘বিশ্বটাকে দেখবো আমি আপন হাতের মুঠোয় করে’। এই যুগান্তকারী পংতিটি যিনি রচেছিলেন তিনি বাঙালি ও বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। প্রাজ্ঞজনদের মতে কবি নজরুলের এই বিস্ময়কর সংকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে আজকের মোবাইল ফোন প্রযুক্তির মাধ্যমে।
বর্তমান বিশ্বে মোবাইল ফোন হচ্ছে বিজ্ঞানের এক বিষ্ময়কর আবিস্কার। কিন্তু কথায় বলে প্রদীপের নিচেই থাকে অন্ধকার। মোবাইল ফোনের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ এমন এক শক্তি যা স্টোর করে রাখা যায় না। আর তাই বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতেই রয়েছে বিদ্যুতের ঘাটতি। বিদ্যুৎ ছাড়া মোবাইল ফোন চার্জ দেয়া কঠিন। বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় লোডশেডিং থাকলে মোবাইল চার্জ দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে স্মার্টফোনগুলো দিনে কয়েকবার চার্জ দিতে হয়। দেশের গ্রামগুলোতে স্মার্টফোন চালানো একটু কঠিন। অনেক সময় বিদ্যুৎহীন থাকে গ্রামগুলো। শহর ও বন্দরগুলো বিদ্যুতের লোডশেডিং’র কবলে পতিত হয় অনেক সময়। অচল হয়ে পড়ে হাজার হাজার মোবাইল সেট। এসব দিক বিবেচনা করেই নরসিংদীর পলিটেকনিক একাডেমি ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেছে হস্তচালিত মোবাইল চার্জার। একাডেমির ইলেকট্রনিক বিভাগের সপ্তম পর্বের ছাত্র আরমান মিয়া ও রহমত উল্লাহ যৌথভাবে এই হস্তচালিত মোবাইল চার্জারটি উদ্ভাবন করেছে। ক্ষুদে বিজ্ঞানীগণ তাদের বর্ণনায় বলেছেন, একটি পুলি, একটি কাঠের তৈরী বেজ, একটি ‘১২ভি ডিসি মটর’, বেল, ৬টি ক্যাপাসিটর, ৭৪০৫ আইসি রেগুলেটর, হিট সিং, পিসিবি বোর্ড ও ক্যাবল সমন্বয়ে তৈরী করা হয়েছে এই চার্জারটি।
চার্জারটির গঠন প্রণালীতে বলা হয়েছে, একটি পুলি ও একটি ১২ ভি ডিসি মটরকে বেলের সাহায্যে সংযুক্ত করে ১২ভি ডিসি মটরের আউটপুট হিসেবে দুটি ক্যাপাসিটর ও একটি রেগুলেটরকে কন্ট্রোলার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এরপর একটি পুলি দিয়ে ফিতার সাহায্যে ১২ভি ডিসি মটরটি ঘুরানো হয়। মটরের ইনপুটে দেয়া যান্ত্রিক শক্তির মাধ্যমে মটর হতে আউটপুট হিসেবে পাওয়া যায় ডিসি এনার্জি। এই ডিসি এনার্জিকে ১০০০ মাইক্রো ফ্যারাড ক্যাপাসিটরের মাধ্যমে স্টোর করা হয় এবং স্টোরকৃত এনার্জি রেগুলেটর ৭৮০৫-’র মাধ্যমে নির্দিষ্ট ৫ভি ডিসি এনার্জিতে পরিণত করা হয়। এরপর এই ভোল্টেজকে ১০০ ফ্যারাড ক্যাপাসিটরের মাধ্যমে ফিল্টার করে ইউএসবি সার্কিটে নিয়ে আসা হয়। এই হস্তচালিত চার্জারের উপকারিতা সম্পর্কে বলেছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে বিদ্যুৎ নেই সেখানে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায়, লোডশেডিং অবস্থায় এই চার্জার ব্যবহার করা যাবে। শুধু তাই নয় অন্ধকারে এ থেকে বাল্ব জ্বালানোও সম্ভব হবে। এই চার্জারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৪৪ ভোল্টের ডিসি এনার্জিও উৎপন্ন করা সম্ভব। এই হস্তচালিত মোবাইল চার্জারটি অতি স্বল্প খরচে তৈরী করা যাবে এবং স্বল্প মূল্যে বাজারজাত করাও সম্ভব হবে। এই হস্তচালিত মোবাইল চার্জারটি সম্প্রতি নরসিংদী জেলা প্রশাসন আয়োজিত ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় প্রদর্শন করা হয়। শত-শত মানুষ চার্জারটি দেখে বুঝে উদ্ভাবক ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা এ ক্ষেত্রে আরো বেশি বেশি গবেষণার মাধ্যমে চার্জারটির মান উন্নয়নের পরামর্শ দেন।
নরসিংদী পলিটেকনিক একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক একএম শহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন, তার একাডেমির ছাত্ররা গবেষণা ও উদ্ভাবনে আগ্রহী। কিন্তু একাডেমির সীমাবদ্ধতার কারণে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে গবেষণার ক্ষেত্রে ব্যাপক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকার যদি ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্ভাবনী শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে চায় দেশ ও জাতির স্বার্থে সরকারকে ব্যাপক পৃষ্ঠপোষণাসহ গবেষণার ক্ষেত্রে আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। আর তা হলেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মেধাবী ছাত্ররা তাদের উদ্ভাবনী কাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হবে।


0 comments:

Post a Comment