এম. এ. সালাম রানা : নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বালুয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ে এক ছাত্রীর ইজ্জতের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ টাকায় উন্নিত হয়েছে। এবার শালিস- দরবার কিংবা বৈঠকে নয়, ধর্ষক পরিবারের পক্ষে আপোষ-মিমাংসায় ভিকটিম পরিবারকে ১ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রস্তাবটি দিলেন একই বিদ্যালয়ের খোদ প্রধান শিক্ষক। একই উপজেলার বালুয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জয়নাল আবেদিন ভিকটিম পরিবারকে বিদ্যালয়ে ডেকে এনে এ প্রস্তাব দিলে স্কুল ছাত্রীর পরিবার হতভস্ব হয়ে পড়ে। গত ১০ মে রাতে আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামের শাহআলমের লম্পট পুত্র অভিযুক্ত ধর্ষক হাসান একই গ্রামের দরিদ্র ইলিয়াস মিয়ার স্কুল পড়–য়া কন্যাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ঘটনার সময় ভিকটিমের ডাক-চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে ধর্ষক হাসানকে আটক করে। এ ঘটনাটি দ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ধর্ষককের পিতা শাহআলম স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় ঘটনাটি সামাজিক ভাবে সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ধর্ষক হাসানকে জনরোষের কবল থেকে মুক্ত করে নিয়ে যায়। বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী ও স্থানীয় আ’লীগ নেতা ওসি উদ্দিন, স্থানীয় ইউপি মেম্বার কামাল, ইকবাল মিয়া, আবদুল হাই ও লিটন এর নেতৃত্বে গত ৬ জুন সর্বশেষ শালিস দরবার অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত শালিসী বৈঠকে ধর্ষক পরিবার ভিকটিম পরিবারকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে উভয় পরিবারকে সমঝোতায় যেতে রায় প্রদান করেন। টাকার বিনিময়ে ইজ্জতের দাম নয় বিধায় ভিকটিম পরিবার দরবারের মাঝে উক্ত রায় প্রত্যাখান করে চলে আসে। নিরূপায় হয়ে ভিকটিম পরিবার স্থানীয় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান “নারী নির্যাতন প্রতিরোধ নেটওয়ার্ক (এনএনপিএন)” ও “এমডিএস” নামের সংস্থার নিকট সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তর, রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ধর্ষক হাসানের বিরুদ্ধে রায়পুরা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়। থানায় মামলা দায়েরের পর ধর্ষক হাসানের পরিবারসহ শালিস দরবারের নেতৃবৃন্দের দৌড়ঝাপ শুরু হয়ে যায়। পূণরায় তারা ভিকটিম পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধমকিসহ আমিরগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির সহায়তায় ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে এলাকাবাসী জানায়। উক্ত ঘটনায় বালুয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী অসিউদ্দিসহ অন্যান্য দরবারীদের নাম মাললায় দেয়া হয়েছে ভেবে স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ কতিপয় শিক্ষরাও ধর্ষক পরিবারের পক্ষে সামিল হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ জুন বুধবার প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদিন ভিকটিম পরিবারকে স্কুলে ডেকে পাঠান। তাদেরকে ধর্ষক হাসানের পরিবারের নিকট থেকে ১ লাখ টাকা নিয়ে ঘটনাটি আর বাড়াবাড়ি না করে বিষয়টি মিমাংসায় যাওয়ার প্রস্তাব দেন। ভিকটিমের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রধান শিক্ষক রক্ষক হয়ে বক্ষকের ভুমিকা পালন করেছে। ধর্ষকের পরিবার ও ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে যারা কাজ করছে প্রকারান্তরে প্রধান শিক্ষক তাদের সহযাত্রী হয়েই নেপথ্যে জোড় চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার প্রায় দেড় মাস অতিক্রান্ত হলেও রায়পুরা থানা পুলিশ রহস্যজনক ভাবে স্কুলছাত্রী নির্যাতনের ধর্ষক হাসানকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এ ব্যাপারে রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম জানান, বালুয়াকান্দি স্কুল ছাত্রী ধর্ষনের ঘটনাটি আপনাদের প্রেসক্লাবের সভাপতি সম্পাদক নিয়ে সমাধানের একটি চেষ্টা করার অনুরোধ জানায়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো: আসাদ জানায়, আসামী এলাকায় না থাকায় তাকে গ্রেফতার করতে পারিনি। প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদিনের মোবাইল ফোন ০১৭২৪২৯২৬৪২ নাম্বারে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন ইউএনও এর নির্দেশ মেনে আমার সহকর্মীদের নিয়ে বিষয়টি সামাজিকভাবে সমাধান করতে ভিকটিম পরিবারকে ডেকে এনেছিলাম। তাদের মতামত আমাদেরকে এখনও জানায়নি। রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এ ধরণের কোন নির্দেশ প্রদান করেননি বলে জানান। এদিকে ভিকটিম পরিবার ন্যায় বিচার পেতে স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
0 comments:
Post a Comment